pbookonline@gmail.com

প্রিয় নবিজির সা. প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্যের সীমানা

0.00৳ 

শেয়ার করুন:

পূর্বপাঠ

সর্বোচ্চ ভালোবাসার একমাত্র অধিকার মহান আল্লাহ তায়ালার। কারণ তিনিই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা রাব্বুল আলামীন। আমরা তারই অপার অনুগ্রহে সৃষ্টি হয়েছি। আল্লাহ হলেন প্রভু, আমরা তার গোলাম। তাই গোলামি ও দাসত্বই হলো আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সঙ্গে ব্যক্তির সবচেয়ে গভীর ও নিবিড় সম্পর্ক। আর তাই মুমিনের বড় সফলতা হলো আল্লাহর প্রকৃত বান্দা হতে পারা। তার প্রতিটি কাজ-কর্ম, আচার-উচ্চারণে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা। সব আদেশ-নিষেধ পালন করে আল্লাহকে রাজি-খুশি করা। তার পূর্ণ অনুগত ও সমর্পিত বান্দা হয়ে থাকা। মানুষের সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য আল্লাহর প্রিয়পাত্র হতে পারা। আল্লাহর ভালোবাসা লাভে নিজেকে ধন্য করা।

আল্লাহকে ভালোবাসা ও তার প্রিয়পাত্র হওয়ার জন্য আল্লাহ নিজেই একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যে মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হওয়া ছাড়া ভালোবাসার দাবি আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আর তা হলো তার রাসূল (সা.) কে ভালোবাসা ও তার আনুগত্য করা। অতএব আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়া ও তার প্রিয়পাত্র হওয়ার একমাত্র পথ হলো রাসূল (স.) কে ভালোবাসা ও তার আনুগত্য করা।

এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন- বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর। আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা আল ইমরান : ৩১)

এই আয়াতে আল্লাহর প্রতি বান্দার ভালোবাসা পোষণের জন্য রাসূলকে ভালোবাসা ও তার অনুসরণকে শর্ত করেছেন। সুতরাং রাসূলকে ভালোবাসা ও তার অনুসরণ ছাড়া আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়া সম্ভব নয়।

তবে মুমিনের হৃদয়ে নবীর প্রতি ভালোবাসা কী পরিমাণ হবে—তার বিবরণও আল্লাহ তাআলা বলে দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন, নবীর সঙ্গে ঈমানদারের প্রাণেরও অধিক সম্পর্ক। তিনি তাদের সত্তা থেকেও তাদের কাছে অগ্রগণ্য। (আহযাব: ৬)

রাসুলুল্লাহ (স.) ও মুমিনের কাছে তার সর্বাধিক প্রিয় হওয়া ও তার প্রতি ব্যক্তির সর্বোচ্চ ভালোবাসা পোষণের কথা বলেছেন। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন- আল্লাহর রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ (পরিপূর্ণ) মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ আমি তার কাছে তার পিতামাতা, সন্তান-সন্ততি ও সকল মানুষের চেয়ে অধিক প্রিয় না হই। (বুখারী, হাদিস : ১৫)

মানুষের প্রতি রয়েছে মানুষের ভালোবাসা। এটাই প্রকৃতির নিয়ম, মনুষ্যত্বের দাবি। কিন্তু প্রিয়নবী (স.) এর প্রতি তার সাহাবীগণের যে ভালোবাসা ছিল, সত্যিই তা পবিত্র ও অতুলনীয়। পৃথিবীর ইতিহাসে তার কোনো নজির খোঁজে পাওয়া যায় না। অতুলনীয় সেই ভালোবাসার হৃদয়ছোঁয়া কয়েকটি দৃষ্টান্ত নিয়েই আমার আজকের আলোচনা।

সাহাবি আবু বকর (রা) এর ভালবাসা

ইসলামের সূচনালগ্নের কথা। তখন মাত্র ৩৯ জন লোক ইসলাম গ্রহণ করেছেন। প্রিয়নবী (স.) এর অনুমতিক্রমে হজরত আবু বকর (রা.) প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু করলেন। প্রথম যেদিন বক্তৃতা করলেন সেদিনই মুশরিকদের গায়ে আগুন জ্বলে উঠলো, হিংস্র হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল ওরা হজরত আবু বকর (রা.) এর ওপর। ক্ষত-বিক্ষত করে দিলো সারা শরীর। দীর্ঘ সময় বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকলেন তিনি।

তারপর সম্বিত ফিরে পাওয়া মাত্রই প্রথমে জিজ্ঞেস করলেন প্রিয় নবীজি (স.) কেমন আছেন? তার মমতাময়ী মা পুত্রকে কিছু খাওয়ার জন্য অনেক অনুরোধ করলেন। কিন্তু হযরত আবুবকর (রা.) শপথ করে বললেন, নবীজির সাক্ষাৎ লাভের পূর্বে কোনো আহার গ্রহণ করবেন না। এরপর রাতে লোক চলাচল বন্ধ হলে পরম মমতাময়ী মা পুত্রকে নিয়ে প্রিয় নবীজির খেদমতে উপস্থিত হলেন। প্রিয়নবী (স.) আবুবকর (রা.) কে দেখে জড়িয়ে ধরলেন। হজরত আবু বকরও তাকে জড়িয়ে ধরলেন। এভাবে জড়াজড়ি করে তারা উভয়ে খুব কাঁদলেন, কাঁদলেন উপস্থিত সকল মুসলমানগনও। এটাই হলো সত্যিকারের ভালোবাসা। যে ভালোবাসার কাছে খাদ্য, চিকিৎসা এমনকি পরম মমতাময়ী মায়ের স্নেহ-ভালোবাসাও হার মানে।

হজরত ওমর, আলী ও ওসমান (রা.) এর ভালোবাসা

হজরত ওমর (রা.) এর বীরত্বের কথা কে না জানে? তিনি ছিলেন মানব ইতিহাসের এক লৌহমানব। অথচ সেই ওমর (রা.) যখন নবীজির ইন্তিকালের সংবাদ পেলেন, তখন তিনি একদম অস্থির হয়ে ওঠলেন। প্রিয়নবীর বিরহের শোক কিছুতেই তিনি সইতে পারছিলেন না, নাঙ্গা তলোয়ার হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। আহত ক্রোদ্ধ কণ্ঠে বলতে লাগলেন- যে বলবে রাসূল (স.) মৃত্যুবরণ করেছেন আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেব। প্রিয়নবী তো তার বন্ধুর নিকট গমন করেছেন মাত্র। হজরত ওসমান (রা.) ও অপ্রকৃতিস্থ হয়ে পড়লেন। দু’দিন পর্যন্ত কোন আওয়াজ বেরুল না তার কণ্ঠ থেকে। হজরত আলী (রা.) এমনভাবে চুপসে গেলেন মনে হচ্ছিল যেন তিনি অনুভূতি শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন।

পরিস্থিতি যখন জটিলরূপ নিচ্ছিল হজরত আবু বকর (রা.) তখন নবীপ্রেমের দাবিতেই হৃদয়মন দৃঢ় করে ওঠে দাঁড়ালেন। সকলকে শান্তনা দিয়ে দ্বীপ্ত কণ্ঠে শোনালেন পবিত্র কুরআনের সেই অমোঘ বাণী- ‘আর মুহাম্মদ (স.) একজন রসূল বৈ তো কিছু নয়! তার পূর্বেও বহু রসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন। তাহলে কি তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন অথবা নিহত হন, তবে তোমরা পশ্চাদপসরণ করবে? বস্তুতঃ কেউ যদি পশ্চাদপসরণ করে, তবে তাতে আল্লাহর কিছুই ক্ষতি-বৃদ্ধি হবে না। আর যারা কৃতজ্ঞ, আল্লাহ তাদের সওয়াব দান করবেন।’ (সূরা আলে ইমরান : ১৪৪)

পবিত্র কুরআনের এই বাণী শুনে সবাই প্রকৃতিস্থ হয়ে গেলেন।

প্রোফাইল

Author

ড. মুহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আরিফি

পাঠকের রিভিউ

Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “প্রিয় নবিজির সা. প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্যের সীমানা”

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping cart
We use cookies to improve your experience on our website. By browsing this website, you agree to our use of cookies.